কীর্তনখোলার তীরে চড়ুইভাতি ।
শফিকুল
ইসলাম ।
সময় কেটে
যায় পাখির ডানার মতো । ভার্সিটি জীবনের প্রতিটি দিনই যেন নানা চমক নিয়ে হাজির হয়। দেখতে দেখতে ইউনিভার্সিটি জীবনের চারটি বছর কেটে গেল। মনে হচ্ছে এইতো
সেদিন ক্যাম্পাসে এসেছি। রোমাঞ্চকর কতো শতো দিন । সবকিছু রেখে আমরা এখন অনার্সের অস্তগামি সূর্য এটাই বাস্তবতা
। ক্যাম্পাসের বর্ণীল জীবনের সৃতি হয়তো মনের মণিকোঠায় কোন এক শীতে উম দিয়ে যাবে।
কিন্তু এইসব ভেবে মন খারাপ করলে কি চলে ? শীতের
মিঠে রোদ আর হিমেল হাওয়ায় চড়ুইভাতির আনন্দে মেতে উঠতে চায় মন। গত ২২ জানুয়ারী
ছিল পলিটিকাল সায়েন্স বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের চড়ুইভাতি।
বরিশালের বুক চিড়ে নেমে এসেছে এক জাদু কাটা নদী 'কীর্তনখোলা'। নদীর তীর ঘেঁষে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক
অপূর্ব লীলাভূমি
গড়ে উঠেছে । আকাশের সমস্ত নীল যেন গিয়ে ঠেকেছে কীর্তনখোলার তীরে । এ নদীর উপর
নির্মিত “শহীদ আবদুর রব শের নিয়াবত সেতু’র উপর
দাড়াইলেই নয়নাভিরাম সৌন্দর্য হাতছানী দিয়ে ডাকে । চারদিকে ঘন সবুজের সমারহ।
চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য নয়নাভিরাম দৃশ্যপট। সেতু থেকে নেমেই বাম পাশে
ইউনিভার্সিটি। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত হল এই সেতুর নিচেই চড়ুইভাতির আয়োজন করা হবে । তারপর দুপুরের খাবার খেয়ে নৌকা নিয়ে হারিয়ে যাবো জীবনানন্দের শহর, কবিতার শহর বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে ।
একদিন
আগে থেকেই চলে চড়ুইভাতির আয়োজনের কাজ । বন্ধু শোভন, রাহাত, ইসমাইল,
আশরাফুল, নাইম,নুসরা, মুমু, লিমা নিয়ে নেয়
ম্যানেজমেন্ট এর সব দায়িত্ব । বান্ধুবী লিমার বাসা থেকে নিয়ে আসা হল থালা-বাসন, পাতিল-খুন্তি সহ যা যা দরকার । নদীর তীরের ব্লক
দিয়ে নিজেরাই তৈরি করলাম চুলা । ব্যাপক আনন্দ উল্লাসের মধ্যদিয়ে সকাল ৯ টা থেকে শুরু হয় রান্নার
আয়োজন । ফুঁকনি দিয়ে ফু, অতপর ঘাম ঝরিয়ে বান্ধুবীদের রান্না
শুরু । খানিকপরেই একটা সাউন্ড বক্স নিয়ে হাজির হলাম। খোলা আকাশের নিচে ঘাসের বিছানায় সাদামাটা
আয়োজন । বৃত্তাকারে বসে মজা করে খাওয়া । শৈশবের সেই
চড়ুইভাতির কথা ব্যস্ত জীবন যেন ভুলেই দিয়েছিল। একটু ভবতেই দু’চোখ ভড়ে চলে আসে সেই অম্লান স্মৃতিগুলো। শৈশবের
সেই রোমঞ্চকর স্মৃতি ফিরে পেলাম।
দুপুরের খাবার খেয়ে বান্ধুবী তন্নির রবীন্দ্রসঙ্গীত যেন দূর করে দিল দিনের সকল
ক্লান্তি । এইদিকে কমেডিম্যান বন্ধু নবীর তিন বান্ধুবীকে একসাথে প্রপোজ করায় ব্যস্ত। তার
কথা তিন জনের একজনকে আজ রাজি হতেই হবে। তবে এই তিন জনের বাইরেও যদি কেউ রাজি থাকে
তাতেও চলবে । সবার অট্ট হাঁসিতে রঙিন হয়ে উঠলো মুহূর্তটি । খাওয়া-দাওয়া,নাচ,
গান, আর আড্ডায় ঝলমলে হয়ে উঠল সারা দিনটি ।
উল্লাস-উচ্ছ্বাস
আর সারাদিনের হৈ হুল্লোড়ের ভরা
দিন শেষে পড়ন্ত বিকালের
সূর্যটা রক্তিম হয়ে পশ্চিম আকাশে একটু ঢলে
পড়লো । এইবার নৌকায় ওঠার প্রস্তুতি । কীর্তনখোলার স্বচ্ছ পানির বুক চিরে এগিয়ে
চলছে আমাদের নৌকা । নদীতে নৌকা ছাড়ার পর নেচে গেয়ে উঠলো সবাই । মাঝির পাশে বসে
আশ্রাফুলের কণ্ঠে বন্ধুদের সম্মিলিত গান । বান্ধুবীরা তখন সেলফি তোলায় ব্যস্ত ,
কেউ কেউ পানিতে পা ভিজেয়ে বসে আছে, কেউ হাত দিয়ে পানির ঢেউ স্পর্শ করার চেষ্টা
করছে । আর কয়েক মিনিট পরে সূর্যটা ডুবে যাবে । মিনিট পেড়িয়ে কয়েক ঘণ্টা কিভাবে
কেটে গেলো কেউই বুজতে পারলাম না । সূর্যটা ডোবার আগেই নৌকা এসে ঘাটে ভিড়ল । বিশ্ববিদ্যালয়
জীবনের স্মরণীয় হয়ে থাকবে এ দিনটি । সোনালি ফ্রেমে আবদ্ধ থাকবে সারাটি জীবন ।
বেঁচে থাকুক বন্ধুত্ব, ভালবাসা ।
অসাধারণ লেখনী ভাইয়া।
উত্তরমুছুনআমি ও আপনার মতো ফিচার লিখতে চাই।