বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সবুজের অভিযান।


শাফিকুল ইসলাম। 

” দাও ফিরিয়ে সে অরণ্য, লও এ নগর – কবির এ আরতি আজ অরণ্যে রোদন এ পরিণত হয়েছে। কেননা অরণ্য দ্রুত নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে মানুষের কুঠারের আঘাতে। বৃক্ষের প্রতি মানুষের উদাসীনতায়। বৃক্ষ আমাদের পরম বন্ধু, মানুষ ও পরিবেশের জন্য এক অমূল্য সম্পদ। কোনো দেশের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য অবশ্যই ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা আবশ্যক। কিন্তু আমাদের রয়েছে সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন মাত্র ১০ ভাগ বনভূমিএবং ৭ ভাগ গ্রামেগঞ্জে সৃজিত বনভূমি । যে দেশে বনভূমি যত বেশি, সে দেশ তত বেশি সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের বনভূমি প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য তাই বৃক্ষ রোপণের বিকল্প নাই। গাছের সাথে মানুষের সম্পর্কটা সৃষ্টির অনাদিকাল থেকে। বোধিবৃক্ষের সাথে জড়িয়ে আছে বুদ্ধের জ্ঞান চর্চার ইতিহাস। কথিত আছে,বাল্মিকী মুনি যে দিব্যজ্ঞান লাভ করেছে তাঁর ও ধ্যান স্হলও কোন এক বৃক্ষতল। তাই জ্ঞান চর্চাস্থল বা প্রতিষ্ঠানের সাথে গাছ বা সবুজের সম্পর্ক আত্মিক।  

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সামগ্রিক শিক্ষা আবহ সুস্থ মনন তৈরীতে সহায়তা করে বৃক্ষ। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পৌণে এক দশক পার হলেও তীব্র রোদে দুদণ্ড বসে গল্পকরা কিংবা আড্ডা দেয়ার জায়গা নেই গোটা ক্যাম্পাসের কোথাও। মাথার উপরে রোদ আর পায়ের নিচের উত্তপ্ত বালুএই রুক্ষতার অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে বৃক্ষরোপন অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবুজ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে  তোলার অঙ্গীকার নিয়ে  বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সঞ্জয় সরকার ও বৃক্ষপ্রেমী  শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে  'সবুজ বাঁচাও, সবুজে বাঁচো' শিরোনামকে সামনে রেখে  শুরু হয়  বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচী ক্যাম্পাসকে সবুজে ভরিয়ে দিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোন ধরনের সহযোগিতা ছাড়াই শিক্ষার্থীদের নিজস্ব অর্থায়ন ও গাছের চারা দিয়ে শুরু হয় সবুজের অভিযান


বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সঞ্জয় সরকার  বলেন,
'প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে সবুজায়ন জরুরি।  বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীদের নিয়েই আমাদের এই সবুজের অভিযান। আমরা চাই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় হোক দুষ্প্রাপ্য গাছের সমারোহ। পর্যায়ক্রমে সারা বছরব্যাপী এই বৃক্ষরোপন অভিযান পরিচালনা করা হবে। '
দুষ্প্রাপ্য কিছু গাছের সমারোহ করতে নিজ উদ্যোগে ঢাকা থেকে নাগলিঙ্গম, নাগকেশর, শ্বেতচাঁপা, কুরচি, চাঁপালিশ, কাঠগোলাপ, তমাল, হিজল, ক্যাসিয়া জাভানিকা, অশোক, কুর্চি,লাল সোনাইল, মহুয়াসহ প্রায় ১৫ প্রজাতির দুর্লভ চারা সংগ্রহ করেন সঞ্জয় সরকার।
ঢাকা থেকে সঞ্জয় সরকার সারের সংগ্রহ করা দুর্লভ বৃক্ষরাজি।



ক্যাম্পাস সবুজায়নে প্রায় দুই শতাধিক দুর্লভ গাছ লাগানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সামনের লেক পাড় আগুনলাল করে  দিতে লাগানো হয়েছে হিজল, সামনের চত্বরের দুই পাশে লাল সোনাইল, ছায়ার জন্য মুক্তমঞ্চের বেঞ্চের পিছনে পিছেন লাগানো হয়েছে কাঠবাদাম গাছক্যাফেটেরিয়ার দুই পাশে  কাঠগোলাপ,একটি স্থলপদ্ম, সামনে অনেকগুলো তমাল,মহুয়া, চাপালিশ। লাইব্রেরির সামনে কিছু চাঁপা বকুল । ক্যাফেটেরিয়া আর লাইব্রেরীর রাস্তার সঙ্গমে দুর্লভ বৃক্ষ নাগলিঙ্গম গাছ।  


জলবায়ু পরিবতর্নজনিত বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা ও ক্রমবধর্মান জনসংখ্যার চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমাদের দেশে বৃক্ষরোপণের কোনো বিকল্প নেইবৃক্ষ নেই, প্রাণের অস্তিত্ব নেই, বৃক্ষহীন পৃথিবী যেন প্রাণহীন মহাশ্মশান।। অফুরন্ত সৌন্দর্যের এক মধুর নিকুঞ্জ আমাদের এ পৃথিবী। এই পৃথিবীকে সবুজে শ্যামলে ভরে দিয়েছে প্রানদায়ী বৃক্ষরাজি।তাই আমাদের চারপাশ সবুজের অভয়ারণ্য গড়ে তুলতে হবে নিজ উদ্যোগে। দেশের স্বার্থে, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে । প্রত্যেকে পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষ রোপণ করি। বাংলাদেশকে সবুজ ও সুন্দর করি।
বৃক্ষরোপণ করতে পেরে তৃপ্তির হাসি ।




মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ফিচার কী? একটি সুন্দর ফিচার কিভাবে লিখবেন? উপাদান, বৈশিষ্ট্য, বিষয়বস্তু ।

চার কৌশলে সর্বোচ্চ সিজিপিএ, পেলেন প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক

কবে জুতা মুক্ত হবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার?