অভিবাসী হাসান আকদের মানবসেবা
অভিবাসী হাসান আকদের মানবসেবা
শফিকুল ইসলাম ও ওমর শাহেদ।
সিরিয়ায় পুলিশ কব্জি গুঁড়িয়ে দিল। রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হয়ে মধ্যপ্রাচ্যে গেলেন। সেখান থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পেরিয়ে যুক্তরাজ্যে এলেন। করোনার সময় হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করছেন হাসান আকদ।
তার গল্প শোনালেন শফিকুল ইসলাম ও ওমর শাহেদ।
https://www.deshrupantor.com/specially/20
পাল্টে যাওয়া জীবন:
সপ্তাহে এক দিন হলেও দুঃস্বপ্নটি ফিরে আসে হাসান আকদের জীবনে। আছেন সিরিয়ায়, প্রচণ্ড আক্রোশে লাঠি দিয়ে তাকে পেটানো হচ্ছে। অনেক চেষ্টার পরও দেশ ছাড়তে পারছেন না। বলছিলেন এই তরুণ, ‘সিরিয়ায় আমার সুখস্মৃতিগুলো এই দুঃস্বপ্নগুলোর কারণে উপেক্ষিত। অবচেতনভাবে এগুলো আমার মস্তিষ্কের ভেতরে কীভাবে ঘুমিয়ে থাকে, তা বড় দুঃখের বিষয়। ’ নিজের সুখস্মৃতিগুলোও ভোলেন না তিনি। সেগুলো হলো লতাকিয়ায় যাওয়ার পথে আনন্দভ্রমণ, হৌসাতে ভেড়ার ঝলসানো মাংস খাওয়া, দামেস্ককে চারপাশের গ্রামগুলোতে বেড়ানো, বন্ধুদের সঙ্গে এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি। প্রিয় দাদা ও দাদির সঙ্গে ডিনার টেবিলে বসে খাওয়া-দাওয়া। সিরিয়ায় যখন গৃহযুদ্ধ শুরু হয় তখন বয়স ২০ বছর।
সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা আন্দোলন করছিল। পড়াশোনা শেষ করে একটি বিদ্যালয়ের ইংরেজি পড়াতেন। বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনের বিভিন্ন দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করেছিলেন। ফলে রাজনৈতিক আন্দোলনে জড়িত সন্দেহ পুলিশ তাকে আটক করে। দুবার এক সপ্তাহ করে আটক ছিলেন। হাসান আকদ বললেন, ‘প্রথমবার যখন কারাগারে ছিলাম, সেটি ছিল সবচেয়ে খারাপ ও বাজে সময়; জেলখানায় যখন-তখন আমাকে নির্যাতন করা হতো। দুই কব্জিতে এখনো ক্ষতচিহ্ন আছে। আমার একটি কব্জি পুলিশ পিটিয়ে ভেঙে দিয়েছে। ফলে সেখানে টিটেনিয়ম ধাতুর একটি পিন লাগাতে হয়েছে। ’ দ্বিতীয়বার তাকে বন্দি করে হাজতে রাখা হয়। একটি কক্ষের মধ্যে দিন কাটত। বেরোতে পারতেন না। জেল থেকে যখন ছাড়া পেলেন তখন আকদের কোনো কাজে যোগ দেওয়া নিষিদ্ধ ছিল। বিদ্যালয়ের শিক্ষকের চাকরিটিও হারালেন।
সাগর পেরিয়ে ইংল্যান্ডে:
এত কিছুর পরও দেশ ছাড়ার কোনো ইচ্ছেই ছিল না হাসান আকদের। তবে নিরাপদ বোধ করলেন না। ফলে আবেদন করলেন। দেশ ছেড়ে প্রথমে আসলেন মধ্যপ্রাচ্যে। সেখান থেকে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভয়ংকর সমুদ্রযাত্রার পর পৌঁছালেন লন্ডনে। দীর্ঘ এই সমুদ্রযাত্রা ক্যামেরাবন্দি করেছেন। তার সঙ্গী ছিলেন তারা, যারা প্রতিটি মুহূর্ত নৌকায় সাগর পাড়ি ঝুঁকিতে ছিল। চরম বিপদে থাকা এই মানুষগুলোর মধ্যে ছিল শিশুও। তারা প্রায়ই পড়ে যাচ্ছিলেন সাগরে। একজন আরেকজনকে ধরে, কখনো বোটের পাশের অংশ ধরে সাগরে নেমে উত্তাল অংশ পাড়ি দিয়েছেন। একটি প্রামাণ্যচিত্রের গল্পে তার এই ক্যামেরাবন্দি ফুটেজ সংযুক্ত হয়েছে। যার নাম ‘একসডাস : আওয়ার জার্নি টু ইউরোপ’, যা ব্রিটিশ অ্যাকাডেমি অব ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন আর্টস প্রতিযোগিতায় গিয়েছে। ইংল্যান্ডে আসার কিছুদিন পর আইনি আশ্রয় লাভ করেন।
ভিন্ন রকম কর্মজীবন:
গত পাঁচ বছর হাসান আকদ সিনেমা ও টিভির প্রোডাকশনে কাজ করেছেন। মনের টানে কাজ করেছেন শরণার্থীদের আশ্রয়দানে সহযোগিতা করে এ রকম আইনি সংগঠনের সঙ্গে। তবে গত দুই মাস তার ক্যারিয়ার অন্যরকম সময় যাচ্ছে। ক্লিনার হিসেবে কাজ করছেন পূর্ব লন্ডনের ব্যস্ত হাসপাতাল হুইপস ক্রসে। কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী আছেন এমন ওয়ার্ডে। তিনি বলেন, ‘এটি স্বেচ্ছাসেবা নয়, ন্যূনতম বেতন দেওয়া হয়। শোধ করার মতো বড় কোনো অঙ্কের ঋণ নেই আমার। অভিবাসীদের কোনো ঋণ থাকে না। কারণ আমরা তো ঋণের জীবনেই আছি। তাদের সাহায্যে বাঁচি। এটি আমাদের অধিকারও। তবে এই পর্যন্ত আমি যতটুকু সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতে পেরেছি, খুব ভালোভাবেই তারা আমাকে গ্রহণ করেছেন। যখন এখানে আসলাম তখন আমার মানসিক ও শারীরিক অবস্থা দুটিই খারাপ ছিল। তারা নিজের অবস্থা ফেরাতে সাহায্য করেছেন। ফলে লন্ডনের লেইটনস্টোন হয়ে গিয়েছে আমার ভাড়া নেওয়া বাড়ি। পৃথিবীর কোনো মানুষের দয়া তার জাতীয়তার পরিচয়ের ওপর নির্ভর করে না। এ কাজটিই আমি করতে চাইছি। আমি আমার প্রতিবেশীদের, আশপাশের মানুষ, হাসপাতালের রোগীদের ও কর্মীদের সাহায্য করতে চাই বলে এখানে কাজ করতে এসেছি। ’ গুগলে জরুরি ভিত্তিতে করোনাভাইরাসে সামনের সারির চাকরি দেখে এটি পেয়েছেন তিনি। সেজন্য তাকে নিবন্ধন করতে হয়েছে। বলেছেন, ‘এভাবে আমি একটি সংযোগ সূত্র পেয়ে গিয়েছি। পাঁচটি হাসপাতাল তখন জরুরি ভিত্তিতে ক্লিনারদের চাকরি দিতে চাইছিল। তাদের একটি হুইপস ক্রস। ’ নিজের বাড়ি থেকে প্রায় এক মাইল দূরত্বে এসে তাকে কাজ করতে হয়।
জাহাজের কর্মী হয়ে:
পত্রিকায় একটি লেখা পড়েছিলেন, তাতে একটি প্রমোদতরীর কাহিনী ছিল। ১৭ দিন পর জাহাজে থাকা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের কীভাবে নামানো হলো। এটা পড়ে আরও মানুষের জন্য কাজ করতে উদ্দীপ্ত হয়েছি। ‘আমি ভেবে দেখলাম, তাদের তো জরুরি ভিত্তিতে ক্লিনারের প্রয়োজন। কারণ করোনাভাইরাস জাহাজের পাটাতনেও বেঁচে থাকে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে দ্বিতীয়বার চিন্তাও করলাম না। ছুটে গেলাম সেখানে। মা-বাবাকেও জানাইনি। সেখানে কাজ শুরু করলাম। শুধু জানতে চেয়েছিলাম সেখানে কী পিপিই (পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট) দেওয়া হবে? তারা বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ’।
আরও মানুষের পাশে:
হুইপস ক্রস হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীর চাকরি নেওয়ার আগে, তার মনে ইচ্ছা ছিল যারা মহামারীর মধ্যে বাস করছেন; তাদের সাহায্য করবেন। মুদি দোকানে থাকে এমন সব উপকরণ বিতরণ করেছেন আইসোলেশনে আছেন এমন সব মানুষের জন্য। স্বেচ্ছাসেবায় কাজ করেছেন ব্রিটিশ ফার্মগুলোতে। যে খাবার সংরক্ষিত থাকবে না এই শঙ্কায় তা বিতরণ করে দেওয়া হয়েছিল। কাজ করতে গিয়ে আমি কখনো শুনিনি যাও। ’ এরপর হাসপাতালের কাজে এলাম।
হাসপাতালে হাসি-কান্নার জীবন:
হুইপস ক্রস হাসপাতালের যে ওয়ার্ডে কাজ শুরু করলেন, তার প্রবেশপথে তিনটি চিহ্ন আছে। প্রথমটি, হাসপাতালের কর্মীরা পিপি পরা না থাকলে ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন না। দ্বিতীয়টি, দর্শনার্থী এখানে আসতে পারবেন না। তৃতীয়টি, আপনি একটি কভিড-১৯ রোগের ওয়ার্ডে কাজ করছেন। ওয়ার্ডটিতে ১৮টি রোগীদের শয্যা আছে। করোনা মহামারী এই সময়ে ওয়ার্ডটি রোগীতে পূর্ণ ছিল। কয়েক সপ্তাহ একটি বেডও খালি ছিল না। রোগীদের সেবা, অক্সিজেন মাস্ক দেওয়ার জন্য চিকিৎসক ও অন্যদের তুমুল ব্যস্ততায় কেটেছে। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে সবার প্রচেষ্টায়। আকদ জানালেন, ‘আজ ওয়ার্ডে ১০ জন রোগী আছেন। আমি মনে করি, লকডাউন শিথিল একটু তাড়াতাড়ি হয়ে গিয়েছে। প্রত্যেকেই দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিষয়ে ভয় পাচ্ছেন। ’ ব্রিটেন ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পড়া ও বিশ্বে মৃত্যুর দিক থেকে দ্বিতীয় কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত দেশ। এ দেশে করোনাভাইরাসের উপস্থিতির মাঝামাঝি সময়ে লকডাউন শিথিল করে দেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালের ৩ জুনের হিসাবে, ব্রিটেনে কভিড-১৯ রোগে মারা গিয়েছেন ৩৯ হাজার ৭২৮ জন আর রোগী আছেন ২ লাখ ৭৯ হাজার ৪৫৬ জন। মানুষ বিশ^াস করে প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক। মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে কাজ করছেন প্রায় কিছুই নেই এমন সব মানুষ। প্রতিদিন আট ঘণ্টা হাতে গ্লাভস পরে, দুটি মাস্ক মুখে দিয়ে, প্লাস্টিকের পিপি গায়ে জড়িয়ে ওয়ার্ডের টয়লেট জীবাণুমুক্ত করেন আকদ। লম্বা লাঠির আগায় মোটা দড়ি বা কাপড় লাগানো ফ্লোর পরিষ্কারক ও ক্লোরিন-ডিটারজেনের মিশ্রণ দিয়ে হাসপাতালের মেজে পরিষ্কার করেন। ময়লা সংগ্রহ করে বাইরে নিয়ে যান। বিশেষ ভাইরাসের ময়লা ফেলার ডাস্টবিন আছে, সেখানে ফেলেন। খুব সাবধানে রোগ ছড়ানোর জায়গা মুছে দেন। পরিষ্কার করেন লাইটের সব সুইচ, দরজার হাতল, জানালা, দরজা ও সিঙ্কগুলো। ‘আপনি যাই ধরুন না কেন, এরপর আপনার হাত পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। আমরা ফেলে দেওয়া যাবে, এমন সব উপকরণই ব্যবহার করি। আপনি একই ময়লা পরিষ্কার করার উপকরণ দুবার ব্যবহার করতে পারবেন না। যখন কোনো রোগী সুস্থ হয়ে চলে যান বা কারও বেদনাদায়ক মৃত্যু ঘটে, আমাদের পুরোপুরি পরিষ্কারের কাজে নামতে হয় সংক্রামক রোগটিকে ঠেকাতে। ’ হাসপাতাল দিনে তিনবার পরিষ্কার করেন। প্রথম সপ্তাহে কাজ করতে এসে হতভম্ব হয়ে গিয়েছেন, যা শুনে এসেছিলেন, এখানে তার চেয়ে আলাদা কাজ করতে হয়েছে। এ কারণেই আমাদের সামনের সারির কর্মী বলা হয়। যারা রোগটির বিস্তার ঠেকাচ্ছেন। দেখতে হয় মরণাপন্ন রোগী। এ অবস্থা আমার জন্য কষ্টদায়ক। লন্ডনের হুইপস ক্রস হাসপাতালের একজন চিকিৎসক ‘ডাক্তার বাবু’ নামে পরিচিত ছিলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। রোগটিতে সংক্রমণ মানে হলো রোগীর গুরুতর হলে একাকী মারা যায়। পাশে আপনজন কেউকে পায় না। এমনকি বাকি সবকিছুর মতো মহামারী রোগটি মৃতের শেষকৃত্যানুষ্ঠানের নিয়মনীতিও বদলে দিয়েছে।
চোখের জলে ভেজা:
এরপর নিজের জীবনের কথা বললেন এই পরিচ্ছন্নতাকর্মী ‘আমি পরিবার থেকে দূরে থাকি। যুদ্ধ ও ভিসাব্যবস্থায় সামাজিক দূরত্ব সিরিয়ানদের কাছে নতুন কোনো বিষয় নয়, তারা এভাবে বেঁচে আছেন। মা-বাবা আমার বাগদানের অনুষ্ঠানে স্কাইপের মাধ্যমে হাজির হয়েছেন। ভাইয়ের ইরাকে হওয়া বাগদানে আমিও সেভাবে ছিলাম। আমার কাছে খুবই স্বাভাবিক। ’ বলে কেঁদে ফেললেন। চোখের পানি মুছে বলেছেন, ‘আমি এ হাসপাতালে দুজন রোগীকে দেখেছি, তারা মারা যাওয়ার আগে ভালোবাসার জনকে স্কাইপে বিদায় বলেছেন। আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের অভিজ্ঞতার মধ্যে একটি। রোগীরা তাদের মৃত্যুর কথা জানতেন না। যদিও শরীর খুব খারাপ ছিল। তাদের প্রিয়জনরা হাসপাতালের কর্মীদের মাধ্যমে জানতেন। ফলে এভাবে শেষ সাক্ষাতের ব্যবস্থা করতে হয়েছে। আমরা চারপাশে এমন রোগীদের নিয়ে আছি। তাদের এক মুহূর্তও ছেড়ে থাকতে পারছি না। আপনজনদের সান্নিধ্য ছাড়াই তাদের শেষযাত্রা করতে হচ্ছে। স্ত্রী, স্বামী, ছেলেমেয়েরা চারপাশে থাকতে পারছেন না। এটি খুব অবিশ্বাস্যও অত্যন্ত বেদনাদায়ক। যেকোনো মানুষের এমন কিছুর অভিজ্ঞতা নেওয়া খুব বেদনাদায়ক, সে কোনো দিনও ভুলতে পারবে না। আমার কাছে এই মহামারী রোগের সবচেয়ে খারাপ দিক হলো মানুষকে একা মারা যেতে হচ্ছে। ’
তাদের কথা তেমন বলা হয় না:
হাসপাতালের হাজারে ১০ জন রোগী, কয়েক ডজন এনএইচএস কর্মী মারা গিয়েছেন কভিড-১৯ রোগে। তাদের অনেকে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অভিবাসীরা এখানে কাজ করতে এসেছেন। লক্ষ্য হলো এমন স্বাস্থ্য সংকটে লড়তে ও রোগীদের সাহায্য করতে। অথচ আলাপ-আলোচনা হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের নিয়ে। তাদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তিনি জানালেন, ‘হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বড় ঝুঁকিতে রয়েছেন। সঙ্গে আছে কুলি, ওয়ার্ডবয় ও স্বাস্থ্যসেবার সহযোগীরা। তাদের শতকরা ৯৯ জনই অভিবাসী। ন্যূনতম মজুরির জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন। তারপরও ধন্যবাদ জানালেন ব্রিটেনের স্থানীয়দের, যারা প্রতি সপ্তাহে এনএইচএসের কর্মীদের বাড়ির সামনে গিয়ে ফুল রেখে মূল্যায়ন করেছেন। সরকার যেভাবে সংকটটি মোকাবিলা করছে, তাতে দ্বিধা প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, ‘তারা প্রতিটি স্তরে ব্যর্থ হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পর ব্রিটেনে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি করোনাভাইরাসে রোগী মারা গিয়েছেন। তারপরও তারা লকডাউন অত্যন্ত ধীর গতিতে বাস্তবায়ন করেছেন। অর্থনীতিকে মানুষের জীবনের চেয়ে বেশি মূল্য দিয়েছেন। ’ যত দিন শরীর ভালো থাকবে, তত দিন কাজ করবেন। তবে এরই মধ্যে আমার দুই কব্জিতে ব্যথা শুরু হয়েছে। ঘর মোছার কারণে ব্যথার স্থানগুলোতে কেউ যেন ছুরি চালিয়ে দিচ্ছে। সেরে ওঠার চেষ্টা করছি। সৌভাগ্যবশত একজন থেরাপিস্ট পেয়েছি, থেরাপি দিচ্ছি। বিশ্বের সব জায়গার আইসোলেশনে মানুষ একভাবে থাকতে পারছেন না। আকিয়াব, গাজা আর ইয়র্কশায়ারের পরিস্থিতি এক নয়। বিদেশিদের প্রতি অহেতুক ঘৃণা বা ভয় ছড়াচ্ছে ব্রেক্সিট উত্তর ইংল্যান্ডে এমন খবর বাড়ছে। ইউরোপের দেশগুলোর সীমান্তে শরণার্থী মানুষ যুদ্ধ ও যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতির মধ্যে পড়ছেন এমন খবরও ছাপা হচ্ছে। তারপরও তিনি আশাবাদী ‘এই মহামারীর মধ্য থেকে ভালো অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে। এই বিশ্ব অভিবাসীদের জন্য আরও উন্মুক্ত ও সদয় হবে। ‘
https://www.deshrupantor.com/specially/2020/06/07/222936
শফিকুল ইসলাম ও ওমর শাহেদ।
সিরিয়ায় পুলিশ কব্জি গুঁড়িয়ে দিল। রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হয়ে মধ্যপ্রাচ্যে গেলেন। সেখান থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পেরিয়ে যুক্তরাজ্যে এলেন। করোনার সময় হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করছেন হাসান আকদ।
তার গল্প শোনালেন শফিকুল ইসলাম ও ওমর শাহেদ।
https://www.deshrupantor.com/specially/20
পাল্টে যাওয়া জীবন:
সপ্তাহে এক দিন হলেও দুঃস্বপ্নটি ফিরে আসে হাসান আকদের জীবনে। আছেন সিরিয়ায়, প্রচণ্ড আক্রোশে লাঠি দিয়ে তাকে পেটানো হচ্ছে। অনেক চেষ্টার পরও দেশ ছাড়তে পারছেন না। বলছিলেন এই তরুণ, ‘সিরিয়ায় আমার সুখস্মৃতিগুলো এই দুঃস্বপ্নগুলোর কারণে উপেক্ষিত। অবচেতনভাবে এগুলো আমার মস্তিষ্কের ভেতরে কীভাবে ঘুমিয়ে থাকে, তা বড় দুঃখের বিষয়। ’ নিজের সুখস্মৃতিগুলোও ভোলেন না তিনি। সেগুলো হলো লতাকিয়ায় যাওয়ার পথে আনন্দভ্রমণ, হৌসাতে ভেড়ার ঝলসানো মাংস খাওয়া, দামেস্ককে চারপাশের গ্রামগুলোতে বেড়ানো, বন্ধুদের সঙ্গে এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি। প্রিয় দাদা ও দাদির সঙ্গে ডিনার টেবিলে বসে খাওয়া-দাওয়া। সিরিয়ায় যখন গৃহযুদ্ধ শুরু হয় তখন বয়স ২০ বছর।
সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা আন্দোলন করছিল। পড়াশোনা শেষ করে একটি বিদ্যালয়ের ইংরেজি পড়াতেন। বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনের বিভিন্ন দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করেছিলেন। ফলে রাজনৈতিক আন্দোলনে জড়িত সন্দেহ পুলিশ তাকে আটক করে। দুবার এক সপ্তাহ করে আটক ছিলেন। হাসান আকদ বললেন, ‘প্রথমবার যখন কারাগারে ছিলাম, সেটি ছিল সবচেয়ে খারাপ ও বাজে সময়; জেলখানায় যখন-তখন আমাকে নির্যাতন করা হতো। দুই কব্জিতে এখনো ক্ষতচিহ্ন আছে। আমার একটি কব্জি পুলিশ পিটিয়ে ভেঙে দিয়েছে। ফলে সেখানে টিটেনিয়ম ধাতুর একটি পিন লাগাতে হয়েছে। ’ দ্বিতীয়বার তাকে বন্দি করে হাজতে রাখা হয়। একটি কক্ষের মধ্যে দিন কাটত। বেরোতে পারতেন না। জেল থেকে যখন ছাড়া পেলেন তখন আকদের কোনো কাজে যোগ দেওয়া নিষিদ্ধ ছিল। বিদ্যালয়ের শিক্ষকের চাকরিটিও হারালেন।
সাগর পেরিয়ে ইংল্যান্ডে:
এত কিছুর পরও দেশ ছাড়ার কোনো ইচ্ছেই ছিল না হাসান আকদের। তবে নিরাপদ বোধ করলেন না। ফলে আবেদন করলেন। দেশ ছেড়ে প্রথমে আসলেন মধ্যপ্রাচ্যে। সেখান থেকে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভয়ংকর সমুদ্রযাত্রার পর পৌঁছালেন লন্ডনে। দীর্ঘ এই সমুদ্রযাত্রা ক্যামেরাবন্দি করেছেন। তার সঙ্গী ছিলেন তারা, যারা প্রতিটি মুহূর্ত নৌকায় সাগর পাড়ি ঝুঁকিতে ছিল। চরম বিপদে থাকা এই মানুষগুলোর মধ্যে ছিল শিশুও। তারা প্রায়ই পড়ে যাচ্ছিলেন সাগরে। একজন আরেকজনকে ধরে, কখনো বোটের পাশের অংশ ধরে সাগরে নেমে উত্তাল অংশ পাড়ি দিয়েছেন। একটি প্রামাণ্যচিত্রের গল্পে তার এই ক্যামেরাবন্দি ফুটেজ সংযুক্ত হয়েছে। যার নাম ‘একসডাস : আওয়ার জার্নি টু ইউরোপ’, যা ব্রিটিশ অ্যাকাডেমি অব ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন আর্টস প্রতিযোগিতায় গিয়েছে। ইংল্যান্ডে আসার কিছুদিন পর আইনি আশ্রয় লাভ করেন।
ভিন্ন রকম কর্মজীবন:
গত পাঁচ বছর হাসান আকদ সিনেমা ও টিভির প্রোডাকশনে কাজ করেছেন। মনের টানে কাজ করেছেন শরণার্থীদের আশ্রয়দানে সহযোগিতা করে এ রকম আইনি সংগঠনের সঙ্গে। তবে গত দুই মাস তার ক্যারিয়ার অন্যরকম সময় যাচ্ছে। ক্লিনার হিসেবে কাজ করছেন পূর্ব লন্ডনের ব্যস্ত হাসপাতাল হুইপস ক্রসে। কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী আছেন এমন ওয়ার্ডে। তিনি বলেন, ‘এটি স্বেচ্ছাসেবা নয়, ন্যূনতম বেতন দেওয়া হয়। শোধ করার মতো বড় কোনো অঙ্কের ঋণ নেই আমার। অভিবাসীদের কোনো ঋণ থাকে না। কারণ আমরা তো ঋণের জীবনেই আছি। তাদের সাহায্যে বাঁচি। এটি আমাদের অধিকারও। তবে এই পর্যন্ত আমি যতটুকু সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতে পেরেছি, খুব ভালোভাবেই তারা আমাকে গ্রহণ করেছেন। যখন এখানে আসলাম তখন আমার মানসিক ও শারীরিক অবস্থা দুটিই খারাপ ছিল। তারা নিজের অবস্থা ফেরাতে সাহায্য করেছেন। ফলে লন্ডনের লেইটনস্টোন হয়ে গিয়েছে আমার ভাড়া নেওয়া বাড়ি। পৃথিবীর কোনো মানুষের দয়া তার জাতীয়তার পরিচয়ের ওপর নির্ভর করে না। এ কাজটিই আমি করতে চাইছি। আমি আমার প্রতিবেশীদের, আশপাশের মানুষ, হাসপাতালের রোগীদের ও কর্মীদের সাহায্য করতে চাই বলে এখানে কাজ করতে এসেছি। ’ গুগলে জরুরি ভিত্তিতে করোনাভাইরাসে সামনের সারির চাকরি দেখে এটি পেয়েছেন তিনি। সেজন্য তাকে নিবন্ধন করতে হয়েছে। বলেছেন, ‘এভাবে আমি একটি সংযোগ সূত্র পেয়ে গিয়েছি। পাঁচটি হাসপাতাল তখন জরুরি ভিত্তিতে ক্লিনারদের চাকরি দিতে চাইছিল। তাদের একটি হুইপস ক্রস। ’ নিজের বাড়ি থেকে প্রায় এক মাইল দূরত্বে এসে তাকে কাজ করতে হয়।
জাহাজের কর্মী হয়ে:
পত্রিকায় একটি লেখা পড়েছিলেন, তাতে একটি প্রমোদতরীর কাহিনী ছিল। ১৭ দিন পর জাহাজে থাকা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের কীভাবে নামানো হলো। এটা পড়ে আরও মানুষের জন্য কাজ করতে উদ্দীপ্ত হয়েছি। ‘আমি ভেবে দেখলাম, তাদের তো জরুরি ভিত্তিতে ক্লিনারের প্রয়োজন। কারণ করোনাভাইরাস জাহাজের পাটাতনেও বেঁচে থাকে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে দ্বিতীয়বার চিন্তাও করলাম না। ছুটে গেলাম সেখানে। মা-বাবাকেও জানাইনি। সেখানে কাজ শুরু করলাম। শুধু জানতে চেয়েছিলাম সেখানে কী পিপিই (পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট) দেওয়া হবে? তারা বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ’।
আরও মানুষের পাশে:
হুইপস ক্রস হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীর চাকরি নেওয়ার আগে, তার মনে ইচ্ছা ছিল যারা মহামারীর মধ্যে বাস করছেন; তাদের সাহায্য করবেন। মুদি দোকানে থাকে এমন সব উপকরণ বিতরণ করেছেন আইসোলেশনে আছেন এমন সব মানুষের জন্য। স্বেচ্ছাসেবায় কাজ করেছেন ব্রিটিশ ফার্মগুলোতে। যে খাবার সংরক্ষিত থাকবে না এই শঙ্কায় তা বিতরণ করে দেওয়া হয়েছিল। কাজ করতে গিয়ে আমি কখনো শুনিনি যাও। ’ এরপর হাসপাতালের কাজে এলাম।
হাসপাতালে হাসি-কান্নার জীবন:
হুইপস ক্রস হাসপাতালের যে ওয়ার্ডে কাজ শুরু করলেন, তার প্রবেশপথে তিনটি চিহ্ন আছে। প্রথমটি, হাসপাতালের কর্মীরা পিপি পরা না থাকলে ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন না। দ্বিতীয়টি, দর্শনার্থী এখানে আসতে পারবেন না। তৃতীয়টি, আপনি একটি কভিড-১৯ রোগের ওয়ার্ডে কাজ করছেন। ওয়ার্ডটিতে ১৮টি রোগীদের শয্যা আছে। করোনা মহামারী এই সময়ে ওয়ার্ডটি রোগীতে পূর্ণ ছিল। কয়েক সপ্তাহ একটি বেডও খালি ছিল না। রোগীদের সেবা, অক্সিজেন মাস্ক দেওয়ার জন্য চিকিৎসক ও অন্যদের তুমুল ব্যস্ততায় কেটেছে। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে সবার প্রচেষ্টায়। আকদ জানালেন, ‘আজ ওয়ার্ডে ১০ জন রোগী আছেন। আমি মনে করি, লকডাউন শিথিল একটু তাড়াতাড়ি হয়ে গিয়েছে। প্রত্যেকেই দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিষয়ে ভয় পাচ্ছেন। ’ ব্রিটেন ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পড়া ও বিশ্বে মৃত্যুর দিক থেকে দ্বিতীয় কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত দেশ। এ দেশে করোনাভাইরাসের উপস্থিতির মাঝামাঝি সময়ে লকডাউন শিথিল করে দেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালের ৩ জুনের হিসাবে, ব্রিটেনে কভিড-১৯ রোগে মারা গিয়েছেন ৩৯ হাজার ৭২৮ জন আর রোগী আছেন ২ লাখ ৭৯ হাজার ৪৫৬ জন। মানুষ বিশ^াস করে প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক। মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে কাজ করছেন প্রায় কিছুই নেই এমন সব মানুষ। প্রতিদিন আট ঘণ্টা হাতে গ্লাভস পরে, দুটি মাস্ক মুখে দিয়ে, প্লাস্টিকের পিপি গায়ে জড়িয়ে ওয়ার্ডের টয়লেট জীবাণুমুক্ত করেন আকদ। লম্বা লাঠির আগায় মোটা দড়ি বা কাপড় লাগানো ফ্লোর পরিষ্কারক ও ক্লোরিন-ডিটারজেনের মিশ্রণ দিয়ে হাসপাতালের মেজে পরিষ্কার করেন। ময়লা সংগ্রহ করে বাইরে নিয়ে যান। বিশেষ ভাইরাসের ময়লা ফেলার ডাস্টবিন আছে, সেখানে ফেলেন। খুব সাবধানে রোগ ছড়ানোর জায়গা মুছে দেন। পরিষ্কার করেন লাইটের সব সুইচ, দরজার হাতল, জানালা, দরজা ও সিঙ্কগুলো। ‘আপনি যাই ধরুন না কেন, এরপর আপনার হাত পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। আমরা ফেলে দেওয়া যাবে, এমন সব উপকরণই ব্যবহার করি। আপনি একই ময়লা পরিষ্কার করার উপকরণ দুবার ব্যবহার করতে পারবেন না। যখন কোনো রোগী সুস্থ হয়ে চলে যান বা কারও বেদনাদায়ক মৃত্যু ঘটে, আমাদের পুরোপুরি পরিষ্কারের কাজে নামতে হয় সংক্রামক রোগটিকে ঠেকাতে। ’ হাসপাতাল দিনে তিনবার পরিষ্কার করেন। প্রথম সপ্তাহে কাজ করতে এসে হতভম্ব হয়ে গিয়েছেন, যা শুনে এসেছিলেন, এখানে তার চেয়ে আলাদা কাজ করতে হয়েছে। এ কারণেই আমাদের সামনের সারির কর্মী বলা হয়। যারা রোগটির বিস্তার ঠেকাচ্ছেন। দেখতে হয় মরণাপন্ন রোগী। এ অবস্থা আমার জন্য কষ্টদায়ক। লন্ডনের হুইপস ক্রস হাসপাতালের একজন চিকিৎসক ‘ডাক্তার বাবু’ নামে পরিচিত ছিলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। রোগটিতে সংক্রমণ মানে হলো রোগীর গুরুতর হলে একাকী মারা যায়। পাশে আপনজন কেউকে পায় না। এমনকি বাকি সবকিছুর মতো মহামারী রোগটি মৃতের শেষকৃত্যানুষ্ঠানের নিয়মনীতিও বদলে দিয়েছে।
চোখের জলে ভেজা:
এরপর নিজের জীবনের কথা বললেন এই পরিচ্ছন্নতাকর্মী ‘আমি পরিবার থেকে দূরে থাকি। যুদ্ধ ও ভিসাব্যবস্থায় সামাজিক দূরত্ব সিরিয়ানদের কাছে নতুন কোনো বিষয় নয়, তারা এভাবে বেঁচে আছেন। মা-বাবা আমার বাগদানের অনুষ্ঠানে স্কাইপের মাধ্যমে হাজির হয়েছেন। ভাইয়ের ইরাকে হওয়া বাগদানে আমিও সেভাবে ছিলাম। আমার কাছে খুবই স্বাভাবিক। ’ বলে কেঁদে ফেললেন। চোখের পানি মুছে বলেছেন, ‘আমি এ হাসপাতালে দুজন রোগীকে দেখেছি, তারা মারা যাওয়ার আগে ভালোবাসার জনকে স্কাইপে বিদায় বলেছেন। আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের অভিজ্ঞতার মধ্যে একটি। রোগীরা তাদের মৃত্যুর কথা জানতেন না। যদিও শরীর খুব খারাপ ছিল। তাদের প্রিয়জনরা হাসপাতালের কর্মীদের মাধ্যমে জানতেন। ফলে এভাবে শেষ সাক্ষাতের ব্যবস্থা করতে হয়েছে। আমরা চারপাশে এমন রোগীদের নিয়ে আছি। তাদের এক মুহূর্তও ছেড়ে থাকতে পারছি না। আপনজনদের সান্নিধ্য ছাড়াই তাদের শেষযাত্রা করতে হচ্ছে। স্ত্রী, স্বামী, ছেলেমেয়েরা চারপাশে থাকতে পারছেন না। এটি খুব অবিশ্বাস্যও অত্যন্ত বেদনাদায়ক। যেকোনো মানুষের এমন কিছুর অভিজ্ঞতা নেওয়া খুব বেদনাদায়ক, সে কোনো দিনও ভুলতে পারবে না। আমার কাছে এই মহামারী রোগের সবচেয়ে খারাপ দিক হলো মানুষকে একা মারা যেতে হচ্ছে। ’
তাদের কথা তেমন বলা হয় না:
হাসপাতালের হাজারে ১০ জন রোগী, কয়েক ডজন এনএইচএস কর্মী মারা গিয়েছেন কভিড-১৯ রোগে। তাদের অনেকে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অভিবাসীরা এখানে কাজ করতে এসেছেন। লক্ষ্য হলো এমন স্বাস্থ্য সংকটে লড়তে ও রোগীদের সাহায্য করতে। অথচ আলাপ-আলোচনা হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের নিয়ে। তাদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তিনি জানালেন, ‘হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বড় ঝুঁকিতে রয়েছেন। সঙ্গে আছে কুলি, ওয়ার্ডবয় ও স্বাস্থ্যসেবার সহযোগীরা। তাদের শতকরা ৯৯ জনই অভিবাসী। ন্যূনতম মজুরির জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন। তারপরও ধন্যবাদ জানালেন ব্রিটেনের স্থানীয়দের, যারা প্রতি সপ্তাহে এনএইচএসের কর্মীদের বাড়ির সামনে গিয়ে ফুল রেখে মূল্যায়ন করেছেন। সরকার যেভাবে সংকটটি মোকাবিলা করছে, তাতে দ্বিধা প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, ‘তারা প্রতিটি স্তরে ব্যর্থ হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পর ব্রিটেনে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি করোনাভাইরাসে রোগী মারা গিয়েছেন। তারপরও তারা লকডাউন অত্যন্ত ধীর গতিতে বাস্তবায়ন করেছেন। অর্থনীতিকে মানুষের জীবনের চেয়ে বেশি মূল্য দিয়েছেন। ’ যত দিন শরীর ভালো থাকবে, তত দিন কাজ করবেন। তবে এরই মধ্যে আমার দুই কব্জিতে ব্যথা শুরু হয়েছে। ঘর মোছার কারণে ব্যথার স্থানগুলোতে কেউ যেন ছুরি চালিয়ে দিচ্ছে। সেরে ওঠার চেষ্টা করছি। সৌভাগ্যবশত একজন থেরাপিস্ট পেয়েছি, থেরাপি দিচ্ছি। বিশ্বের সব জায়গার আইসোলেশনে মানুষ একভাবে থাকতে পারছেন না। আকিয়াব, গাজা আর ইয়র্কশায়ারের পরিস্থিতি এক নয়। বিদেশিদের প্রতি অহেতুক ঘৃণা বা ভয় ছড়াচ্ছে ব্রেক্সিট উত্তর ইংল্যান্ডে এমন খবর বাড়ছে। ইউরোপের দেশগুলোর সীমান্তে শরণার্থী মানুষ যুদ্ধ ও যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতির মধ্যে পড়ছেন এমন খবরও ছাপা হচ্ছে। তারপরও তিনি আশাবাদী ‘এই মহামারীর মধ্য থেকে ভালো অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে। এই বিশ্ব অভিবাসীদের জন্য আরও উন্মুক্ত ও সদয় হবে। ‘
https://www.deshrupantor.com/specially/2020/06/07/222936
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন