বরগুনার আশা জসীম উদ্দিনের ‘হোপ বরগুনা’
শফিকুল ইসলাম
করোনাভাইরাসের আক্রমণে মানবেতর জীবনযাপন করছেন হাজার, হাজার মানুষ। এমনদের সহযোগিতার জন্য দেশের দক্ষিণের নদীনির্ভর জেলা বরগুনায় গড়ে উঠেছে ‘হোপ বরগুনা’। এই মানবিক প্লাটফর্ম জেলা শহরের অলি, গলিতে অসহায় মানুষের দ্বারে সহয়তা পৌঁছে দিয়েছেন। তারা একঝাঁক উদ্যমী তরুণ, তরুণী। ৫ হাজার ৮শ ৮৫ টি পরিবারের ২৯ হাজার ৯শ ২৫ জন অসহায়কে খাদ্য সাহায্য, শিশু, গর্ভবতী নারীদের পুষ্টিকর খাবার, অস্বচ্ছল পরিবারের কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন সুরক্ষা সামগ্রী, রমজানে ইফতার, বয়ষ্কদের চিকিৎসা সহায়তায় অর্থ, পথ কুকুরদের রান্না করা খাবার বিতরণসহ ১১টি প্রকল্পে সহায়তা কার্যক্রম চালিয়েছেন একটানা ৯১ দিন।আর মানবিক এই কাজের নেপথ্যের নায়ক বরগুনার সন্তান, গণমাধ্যমকর্মী জসীম উদ্দিন ।
বিঃদ্রঃ লেখাটি প্রকাশের তারিখ ২০ জুন ২০২০।
যাত্রার হল শুরু
সকাল গড়িয়ে দুপুর। বাসা থেকে সবজি কেনার জন্য বাজারে গিয়েছিলেন এম জসীম উদ্দীন। রিকশায় ফেরার সময় দেখলেন, পথঘাট ফাঁকা, তেমন লোকজন নেই। ব্যস্ত শহরটা কেমন অচেনা লাগছে। ফেরার পথে রিক্সার প্যাডেলের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ মনে হলো, নিত্য আয়ের মানুষের রোজগার তো বন্ধ। রিক্সা থেকে নেমে ২০ টাকা ভাড়ার সঙ্গে অতিরিক্ত ৩০ টাকা দিলেন রিকশাওয়ালাকে। দু'কদম সামনে যেতেই পেছনে ডাক। ‘দাদা, সকালে কিচ্ছু খাই নাই। এ্যাহন বেলা ১২টা ঘরে চাল নাই। আমহে যদি আর কয়ডা টাহা দিতেন, হ্যালে মুই দু মুঠো চাল নিয়া বাসায় ফেরতাম।’ চালকের এমন আকুতি মর্মমূলে আঘাত করলো। ২৫ মার্চ তার ছেলে হোসেন হৃদ্য রাহমানের জন্মদিন। প্রতিবছর খুব ঘটা কওে কেককাটা, ভালো ভোজের আয়োজনসহ নানা আয়োজনে, উৎসবে পালন করেন জন্মদিন; কিন্তু এবার সে আনন্দ আয়োজন কথা ভুলে মনে পড়ে রইলো রিক্সা চালকের কাছে। কিছুতেই ভুলতে পারছেন না তার মলিন মুখের সেই আকুতি। সিদ্ধান্ত নিলেন, জন্মদিনের আয়োজন সব বাদ দিয়ে সে অর্থে এসব মানুষের খাবার কিনবেন। সেদিনই ১০০ কেজি চাল, ১০ কেজি মসুর ডাল, ২০ কেজি আলু কিনে ২০টি পরিবারের কাছে পৌঁছে দিলেন। তাদের কাছে যাওয়ার পর বুঝতে পারলেন, অভাব কত তাড়া করছে তাদের।
![]() |
ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন তারা কদিনের খাবারের রসদ |
দেশের প্রায় দেড় কোটি মানুষ বেকার হয়ে পড়ছেন। দিন এনে দিন খাওয়া বা স্বল্প আয়ের এসব মানুষের অবস্থা যে কতটা মানবেতর, কাছ থেকে না দেখলে তারও অজানাই থাকত। সামর্থ্য অনুযায়ী তাই আরও মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নতুন সংকল্প করলেন। জসীম উদ্দিন ‘হোপ বরগুনা’ ফেসবুক গ্রুপ খুললেন। স্বাধীনতা দিবসের রাতে কাছের ছোট ভাই রাকিবুল ইসলামকে ফোন করে জানালেন মনের বাসনাÑকর্মহীন অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে হবে। সেদিনই ডোমেইন কিনলেন। সারা রাত জেগে করলেন ওয়েব সাইট তৈরির কাজ। সাত সকালে পাঁচজন স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে শুরু হলো আরও সাহায্য করা। চাল, ডাল, আলু, মরিচ, সাবানসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনা হলো। বিকেলে দস্তুও মতো কাজে নেমে পড়লেন সবাই। খুঁজে খুঁজে ৫০ অসহায় পরিবারকে সাহায্যগুলো দিলো ‘হোপ বরগুনা’। এরপর তাদের আর টাকা নেই, কিন্তু কারো কাছে টাকা চাওয়া হলো না। নিজেই গড়লেন জসীম উদ্দিন ফান্ড। সাহায্য না চাইলেও ফেইসবুকে কার্যক্রমটি ব্যাপক সাড়া ফেললো। কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র থেকে তার পরিচিত, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব কেউ ৫০, ১০০ ডলার সহযোগিতা পাঠালেন।এক ব্রিটিশ নাগরিকও সহয়তা করেছেন মানবিক এই কাজে। রাত দেড়টায় ৫ হাজার টাকা এলো এক চাকরিজীবীর। তবে অর্থের ভারটা বেশিরই যাচ্ছে জসীমের নিজের পকেট থেকে। এভাবেই গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে চললেন।
সবার জন্য খাদ্য
বরগুনা শহরের ওয়ার্ড অনুসারে হোপ বরগুনা পুরো শহরকে ভাগ করে করলো সমীক্ষা। সহয়তা করার আগে সত্যিকারই যাদের সাহায্য প্রয়োজন, তাদের খুঁজে বের করলেন স্বেচ্ছাসেবকরা। ভেরিফাই করার জন্য নেওয়া হলো ওই এলাকার তৃতীয় স্থানীয় ব্যক্তির সাহায্য। এভাবেই তৈরি হলো শহরের ৮ ওয়ার্ডের ৪ হাজার অসচ্ছল পরিবারের তালিকা। প্রতিটি পরিবারকে ৫ কেজি চাল, ১ কেজি আলু, ৫শ গ্রাম ডাল, ১৫০ গ্রাম শুকনো মরিচ, সাবান নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রি দেয়া হয়।
২ নম্বর ওয়ার্ডের গৌরি চন্না ইউনিয়নের লাউকরতলা, শিপেরখাল, মনসাতলী, ৩ নম্বর কেউড়াবুনিয়া এলাকার কেওড়াবুনিয়া, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বটতলা, ডিকেপি র্ডো, কেজি স্কুল, ধানসিঁড়ি রোড, ক্রোক স্লুইজ, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আমতলা পাড়, পিটিআই, ব্যাংক কলোনি, হাই স্কুল সড়ক, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বুড়িরচর ইউনিয়নের হাজার বিঘা, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদও রোড, কাঠপট্টি, পশ্চিম বরগুনা, ৮ নন্বর ওয়ার্ডের কলেজ রোড, ব্রাঞ্চ রোড, হাসপাতাল রোডের দক্ষিণ পাশের ছিন্নমূল মানুষের বসতি, জিলা স্কুলের পূব পাশের বড়িয়াল পাড়া, ধুপতি, সোনাখালির আশ্রয়ণসহ বিভিন্ন স্থানে দেয়া হয় এ সহায়তা।
শিশুদের জন্য ভালোবাসা
বরগুনা স্টেডিয়ামের পাশের আবাসন প্রকল্প, জেনারেল হাসপাতালের পাশের বস্তি ও বড়িয়ার পাড়া বস্তির প্রতিটি শিশুকে তারা শুরু থেকে নিয়মিত উচ্চ প্রোটিন ও শক্তির খাবারের সঙ্গে তাদের শারিরীক ও মানসিক বিকাশে দিয়ে চলেছেন বিভিন্ন দেশীয় ফলমূল। এলাকাগুলোর মোট ৪ হাজার শিশুকে তরল দুধ, ডিম, নুডলস, খিচুড়ি, সেমাই, বিস্কুট, আম, জামরুল, লিচুসহ নানা জাতের মৌসুমি ফল ও দুগ্ধজাত খাবার বিতরণ করছেন।
করোনাভাইরাসে বিবর্ণ ঈদের দিন ঘওে, ঘরে রঙিন হাসি পৌঁছে দিয়েছে হোপ বরগুনা। শহরের বিভিন্ন বস্তিতে ১ হাজার গরিব, অসহায় পরিবারকে ঈদ সামগ্রী দিয়েছেন তারা। ৪ শ পরিবারকে সেমাই, গুড়োদুধ, ৩ শ শিশু, বৃদ্ধ ও নারীকে নতুন জামা, পোশাক, লুঙ্গি; ঈদের দিন হোপ বরগুনার সেচ্ছাসেবকদের হাতে রান্না মোরগ-পোলাও, ডিম, ফিরনি ও প্রতিটি শিশুকে একটি করে ক্যান্ডি ও ডেইরি মিল্ক চকলেট দিয়েছেন তারা। এখনো চলছে আর সব প্রকল্পের মতো।
কিশোরীদের হাইজিন পণ্য
আন নিসা (ছদ্মনাম)’ র বয়স ১৩। স্থানীয় একটি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। বিজ্ঞানের মেধাবী ছাত্রী হিসেবে স্কুলের সবাই চেনেন। শহরের খাকদোন নদের উত্তরে ঝুপরি ঘরে রিকশাচালক বাবা ও গৃহিণী মায়ের স্নেহ-আদরে বেড়ে উঠছে মেধাবী কিশোরীটি। করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাব শুরুর হওয়ার বেশ কিছুদিন আগে নিসা স্কুলে বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্যসুরক্ষার প্রশিক্ষণ লাভ করেছে। বয়ঃসন্ধিকালের বিশেষ সময়ে নিজের স্বাস্থ্যের কীভাবে যত্ন নিতে হবে সহপাঠীদের সচেতনও করেছে। নিজেকে সর্বোচ্চ সুরক্ষা দেওয়ায় ত্রুটি করে না। মার্চের শুরুতে বরগুনা জেলা প্রশাসন জেলার ৩শ ৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য চালু করেছে ‘নন্দিনী হাইজিন কর্নার’। নিসার স্কুলেও ছিল এই হাইজিন কর্ণার। সেখান থেকেই সে মাসের বিশেষ দিনগুলোতে প্রয়োজনীয় হাইজিন পণ্য এনে ব্যবহার করত। মাও ফার্মেসি থেকে ব্যক্তিগত হাইজিন পণ্য সংগ্রহ করে দিতেন মাঝে, মাঝে।
করোনাভাইরাসের দুঃসময়ে চারপাশ যখন স্থবির, তখন নিসার বয়সন্ধিকালীন সময়ের শরীর তো লকডাউনে নেই। প্রতি মাসের মতো এ মাসেও বিশেষ দিনগুলো এসে যায়। কিন্তু স্কুল এখন বন্ধ। বাবাও আর রিকশা নিয়ে বের হতে পারছেন না। পরিবারের সবার দুইবেলা অন্ন জোগাড় করাই এখন কষ্টের। মায়ের কাছেও টাকা নেই। মেয়ের অস্থিরতা দেখে মা শুধু চোখের পানি ফেলেন। হোপ বরগুনার একজন নিবেদিত স্বেচ্ছাসেবক মুন সামাজিক নানা কর্মকান্ডে আছেন; নিসার সঙ্গে তার মাঝে, মধ্যে দেখা হয়। এবার একদিন নিসা সমস্যার কথা খুলে বলছেন। নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর কিশোরীদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে তারা এই পরিবারগুলোর মেয়েদের ব্যক্তিগত হাইজিন পণ্য প্রদান শুরু করলেন। খাকদোন নদের পাড় লাকুরতলা এলাকায় নিম্নবিত্ত পরিবারের ১০ থেকে ১৯ বছরের মোট ১শ ৫০ জন কিশোরীর মাঝে নিয়মিত ব্যক্তিগত হাইজিন পণ্য বিতরণ করছেন তারা। প্রতিটি প্যাকেজে ১০টি স্যানিটারি ন্যাপকিন, বিউটি সোপ, কাপড় ধোয়ার সাবান ও শ্যাম্পু আছে।
সবার জন্য ইফতার
প্রতি বছরের মতো আপন মহিমায় রমজান এলেও এবার ছিল না উৎসবের আমেজ। বরগুনার মোড়ে মোড়ে ইফতারের পসরা; মসজিদে মসজিদে সাধারণ মানুষের জন্য ছিল না ইফতারের ব্যবস্থা। নিম্নবিত্ত ও অসহায় মানুষের কাজ বন্ধ। তাদের ঘওে নেই সেহরির চাল, ইফারের আয়োজন।
![]() |
ইফতার উপহার পেয়ে বিহব্বল রোজাদার অসহায় মানুষ |
৫ শ গরীব ও নিম্নবিত্ত পরিবারে ইফতারের ছোলা, চিড়া, চিনি, মুড়ি, সেমাই, খেজুর ও সেহরির চাল,আলু, ডাল,ডিমসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দিয়েছে হোপ বরগুনা। প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন মোড়ে, বড়িয়ারপাড়া, মাদ্রাসা ব্রিজ, শেখ রাসেল চত্ত্বর, প্রেসক্লাবের পাশের বস্তিতে ১শ রোজাদারদের মধ্যে বিতরণ করেছেন তারা খিচুড়ি, বিরিয়ানি, ছোলা, ডিম, বেগুনী, আলুর চপ, খেজুর, মুড়ি। তাছাড়াও প্রতিদিন ৫০ জন শিশুরকে উপহার দিয়েছেন আধা লিটার করে দুধ, সিদ্ধ ডিম ও উচ্চ প্রোিিটনের বিস্কুট।
প্রাণীদের খাদ্য
হোটেল রেস্টুরেন্ট , সাধারন মানুষের কাছ থেকে খাবার বিলি পেত বরগুনা পৌরসভার পথ কুকুর বিড়ালগুলো, কিন্তু লকডাউনে খাবারের উৎসগুলোসব বন্ধ হওয়ায় তারা অসহায় ও বেপরোয়া। ওদের এই দুর্যোগে ন্যুনতম একবেলা খাবারের ব্যবস্থা করতে শহরকে ৪টি জোনে ভাগ করেছে হোপ বরগুনা। স্বেচ্ছাসেবকরা কোন জোনে কতটি প্রাণী আছে শনাক্ত করেছে। এভাবে মোট ২শ ২৫ টি কুকুর-বিড়ালের সন্ধান পেয়েছেন। প্রতিদিন রাত ৮টা বাজলেই আরো কাজের মতো ওদের জন্য খাবারগুলো নিয়ে নেমে পড়েন তারা। প্রথমে দেখেছেন, খাবােেরর জন্য ওরা বিভিন্ন দিকে চলে গিয়েছিল। তবে খাদ্য পেয়ে ফিরেছে একে, একে। এখন তারা রাস্তায় গিয়ে ওদের ডাকলে, লেজ নাড়তে নাড়তে হাজির হয় সব। কেউ থেমে থাকা বাসের নিচ থেকে, কেউ গাছের আড়াল থেকে আসে। দূর থেকে দল বেঁধে দৌড়ে আসে। প্রথম ২-৩ দিন মাস্ক ও গ্লাভস পড়া মানুষগুলোকে অন্যরকম দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে দূরে গিয়ে থাকত। এখন আর যায় না, চারপাশে ঘুর, ঘুর করে থাকে। খাবার দেওয়া মাত্রই খেতে শুরু করে ক্ষুধার্ত প্রাণগুলো।
মাথা গোজার ঠাঁই
তালতলী উপজেলার বড়বগী ইউনিয়নের পাজরাভাঙ্গা গ্রামে বাড়ি তারা বানুর। কয়েক বছর হয়ে গেল স্বামী নেই। রেখে যাওয়া ভিটায় ঘর তুলে একাকী দিন যাপন করছেন। সুপার সাইক্লোন আম্ফান শেষ সম্বল বাড়িতে হানা দিয়েছে। আঘাতে ঘরের চাল উড়ে গেছে, দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে। ঘরটিই উপড়ে যাওয়ার মতো হয়েছে। স্থানীয়রা কিছু অস্থায়ী খুঁটিতে ঠেকিয়েছেন। যেকোনো হালকা ঝড়, বাতাসেই পড়ে যাবে।
![]() |
তারা বানু |
তারা বানুর এই ঘর মেরামতের নগদ সহায়তার পাশাপাশি তাকে বাঁচার জন্য চাল,ডাল,আলু, পেঁয়াজ,চিনি, সেমাই,গুড়ো দুধসহ ১ মাসের নিত্যপণ্য সাহায্য করেছে হোপ বরগুনা। আম্ফানে বরগুনার উপকূলীয় এলাকাগুলোতে মানবেতর হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। করোনাভাইরাসের মহা দুর্যোগে আছেন তারা। তাদের মতো সংখ্যালঘু আদিবাসী ‘রাখাইন’রা। এই সম্প্রদায়ের ৫০ টি পরিবারসহ মোট ১শ পরিবারকে জরুরী খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি পুনর্বাসন করে দিয়েছেন। তালতলীর ৩ পরিবারকে ১ মাসের ভরণপোষণসহ করেছেন পুনর্বাসন।
প্রকৃতির পাশে
লকডাউনের মধ্যেও বন উজাড়ের ফলে পৃথিবী থেকে সাড়ে ছয় হাজার কিলোমিটার বনভূমি হারিয়ে গিয়েছে, কিন্তু বিনিময়ে প্রকৃতিকে আমরা কী দিয়েছি? টানা ৯১ দিনের বেশি সাহায্য কার্যক্রম চালাতে গিয়ে তারাও বাধ্য হয়ে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন ব্যবহার করেছেন।
![]() |
বৃক্ষ রোপণ কমূসূচি |
তবে পরিবেশ বাঁচাতে পরে মহামারি কভিড ১৯ রোগের মধ্যেই ৫ ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসে বিভিন্ন প্রজাতির মোট ১শ টি ফলজ,বনজ ও ঔষধি গাছ রোপন করেছে হোপ বরগুনা। আম, জাম, লিচু,কাঁঠাল থেকে শুরু করে অর্জুন, হরিতকি, বহেরা, অমলকি বকুল ইত্যাদি গাছেন ১ জোড়া করে গাছ রোপন করেছেন শহরের বিভিন্ন স্থানে।
হোপ বরগুনার আশার ৯১ দিন
করোনাভাইরাসের এই দুঃসময়ে ২৬ মার্চ থেকে একটানা ৯১ দিন মানুষের কাছে সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন তারা মোট ১২ তরুণ, তরুণী। গতানুগতিক ধারায় না গিয়ে তারা সবার ঘওে, ঘরে গিয়ে পৌঁছে দিচ্ছেন তাদের বহু কষ্টের উপহারগুলো। এই পর্যন্ত মোট ৫ হাজার ৮শ পরিবার ও ৭ হাজার ৬ শ অসচ্ছল মানুষকে সাহায্য করেছেন। বয়ষ্কদের ওষুধ কেনার জন্য নগদ সাহায্য, ঈদে শিশুদের শার্ট, প্যান্ট, ফ্রক, মেয়েদের থ্রিপিস, বৃদ্ধবৃদ্ধাদের শাড়ি-লুঙ্গি, গর্ভবতী মায়েদের গর্ভকালীন পুষ্টিকর খাদ্যও দিয়েছেন। করোনাভাইরাসের হাত থেকে মানুষ ও প্রাণীদের বাঁচাতে হোপ বরগুনার ১১টি প্রকল্পে মোট সুবিধা পেয়েছেন সাড়ে ৩৭ হাজার অসহায় মানুষ।
আশার বার্তা ছড়াচ্ছেন
এত অল্প হলেও স্বচ্ছাসেবকরা সারাদিন জান বাজি রেখে কাজ করছেন। ফলে অসহায়, দুর্গত মানুষের সম্বল হয়েছেন। শহরে পেয়েছেন আলাদা সম্মান। হোপ বরগুনার অপারেশন বিভাগের প্রধান রাকিবুল ইসলাম বললেন, ‘আমরা কাজ করতে গিয়ে মিশ্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি। আনন্দাশ্রু, দোয়া পেয়েছি; কিছু প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও পড়তে হয়েছে। প্রকৃত অসহায় মানুষদের তালিকা তৈরি করতে গিয়ে ব্যক্তিস্বার্থবিরোধী কাজ করায় স্থানীয় কয়েকজন খারাপ লোকের রোষানলে পড়েছি। তবে এখনো সামলে আছি সব বিপদ। সাহায্য প্রয়োজন এমন কাজে সবার। সংগঠনের ভবিষ্যৎ হলো আমরা টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নে বিশ্বাসী। সেজন্য কাজ করতে গিয়ে একাধিক প্রকল্প নিয়েছি। হোপ বরগুনা মানবকল্যানে নিয়মিত কাজ করবে। এই সময় সমাজের বিত্তশালী মানুষরা আমাদের সাহায্য করবেন বলে আশা করছি।’
অনন্য জসীম উদ্দিন
প্রতিষ্ঠাতা জসীম উদ্দিন |
তাদের সবার মূল সূত্র; এই সংগঠনের প্রধান ও চালিকাশক্তি জসীম উদ্দিনের জন্ম বরগুনা শহরের ডিকেপি রোডে। বরগুনা জেলা স্কুল, সরকারি কলেজ ও বরিশাল সরকারি বি এম কলেজে পড়ালেখা শেষে গণমাধ্যম কর্মী। দৈনিক প্রথম আলোর বরিশাল আঞ্চলিক অফিস প্রধান। কাজের জন্যই জন্মস্থান ছেড়ে এসেছেন বরিশালের মূল অফিসে। এ শহরেই শুরু করেছেন তার হোপ বরগুনার। কাজ করতে গিয়ে কিছু মানুষের ঈর্ষার শিকার হয়েছেন, তৈরি হয়েছে কিছু শত্রু। ব্যক্তিগতভাবে পড়েছেন নান বাঁধায়। তাদের স্বেচ্ছাসেবকদের নানাভাবে ভীতি, নিরুৎসাহ দেওয়া হয়েছে। এই সাংবাদিক ও সমাজসেবক বলেছেন, ‘আমরা অন্যদের মতো নই। আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস ‘উন্মুক্ত মতাদর্শের মানুষ থাকা ভাল। আমরা চাই এই সংগঠন দীর্ঘজীবী হবে ও সব সময় ভালো কাজ করবে। আমরা পরিশ্রমী, পরোপকারী, মানবিক প্রজন্মও গড়ে তুলতে চাই, যারা শুধু নিজের জন্য ভাববে না, নিজের জন্য বাঁচবে না; সবার চিন্তায় সবাইকে নিয়ে ভালো থাকা ও ভালোভাবে বাঁচার চেষ্টা করবে। সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষ, প্রাণী ও প্রকৃতির পাশে দাঁড়াবে।’ ঈদের দুই দিন বাদে ২৬ মার্চ থেকে আজ পর্যন্ত কোনো প্রকল্পের কাজই হোপ বরগুনা থামতে দেয়নি। একেক দিন একেক প্রকল্পে কাজ করেন তারা।
জসিম ভাইয়ের এমন উদ্যোগ আসলেই প্রশংসনীয়, তিনি বরগুনার গর্ব। এগিয়ে যাক সংগঠন হোপ বরগুনা।
উত্তরমুছুন