নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করুন।
নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করুন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডামাডোল বেজে উঠেছে। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাওয়া শুরু করেছে প্রার্থীরা। শহর থেকে শুরু করে পাড়া - মহল্লার চায়ের আড্ডায় আলোচনার প্রধান ইস্যু নির্বাচন। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চায় ভোটাররা। সবার প্রত্যাশা একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন। গণতন্ত্রের পূর্ব শর্তও অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। গণতন্ত্রে নির্বাচনের মাধ্যমেই কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন হয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণই ক্ষমতার মূল উৎস। সবার দৃষ্টি এখন নির্বাচনের দিকে কারন আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রাক্তন সব নির্বাচনের চেয়ে একটু ভিন্ন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হওয়ার পর প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেনি। কিন্তু সেই বিএনপিই ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে দলীয় সরকারের অধীনে ইতোমধ্যে প্রচারনা শুরু করে দিয়েছে। সরকারি দলও নির্বাচনী প্রচারনায় মাঠে নেমে পড়েছে। কিন্তু দলীয় সরকারের অধীনে সব দল মাঠে সমান সুযোগ সুবিধা পাবে কিনা এ নিয়ে জনমনে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল তা নির্বাচনী প্রচারনার তিনদিনের মধ্যেই মূর্ত হয়ে উঠেছে। সরকারী দলের সাথে ঐক্যফ্রন্টসহ বিভিন্ন দলের আলোচনায় সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত থাকবে এবং নির্বাচনী প্রচারনায় ক্ষমতাসীন দল সরকারী কোন সুবিধা নিবে না বলে জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচারণার প্রথম দিনে ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দ্বিতীয় দিনেও দেশের ১৮ জেলায় বিরোধী জোটের প্রার্থীদের প্রচারণায় হামলা, ভাঙচুর ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। আক্রান্ত হয়েছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহর। তৃতীয় দিনেও সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় ধানের শীষের সমর্থক ও প্রার্থীর গাড়িবহরে আ.লীগের নেতাকর্মীরা হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছে। বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যে প্রচারণায় অংশ নিলেও নানা প্রতিরোধ, হামলা, ভাঙচুর ও গ্রেপ্তারের মুখে পড়তে হয় তাদের। আওয়ামী লীগ বিএনপির সংঘর্ষে প্রাণহানীর ঘটনাও ঘটেছে। নির্বাচনী প্রচারনা শুরু হতে না হতেই রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। যা সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায়। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর আইনমন্ত্রী নির্বাচনী এলাকা থাকা অবস্থায় সরকারি কোনো সুবিধা নেবেন না বলা হলেও তিনি পুলিশ প্রটোকল নিয়ে জোরেশোরে নির্বাচনী প্রচারণা করছেন। সব দল অংশ নিলেও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ এখনও তৈরি হয়নি। সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করে কেউ কেউ নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে। অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল রাস্তায় বের হলেই হামলা, মামলা, ভাঙচুরের শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশে অতিতের সব নির্বাচন যে এর থেকে ভিন্ন তা নয়। বরং যে দলই ক্ষমতায় এসেছে তারাই বিরোধী দলের উপর দমন নিপীড়ন চালিয়েছে। এটাই এদেশের রাজনৈতিক কালচারের সবচেয়ে খারাপ দিক। সুস্থ গণতন্ত্র চার্চার খাতিরে
সব রাজনৈতিক দলকে এই মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু ও সহিংসতা মুক্ত হবে তা নিশ্চিত করতে পারে ক্ষমতাসীন সরকার। রাজনৈতিক দলগুলোর একে অপরের প্রতি যে অবিশ্বাস ও অনাস্থা তৈরি হয়েছে তা দূর করতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। এর পুরো দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশন উপর বর্তায়। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে তেমন ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে না। একটি অংশগ্রহন মূলক নির্বাচনের স্বার্থে বিরোধীরা যাতে নির্ভয়ে নির্বাচনী প্রচারনায় অংশ নিতে পারেন, প্রার্থীরা যাতে গ্রেফতারের মুখোমুখি না হন, নেতা-কর্মীরা যাতে নতুন মামলার মুখে না পড়েন এবং ভোটাররা যাতে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারেন সে বিষয়গুলো নির্বাচন কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। যদি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা না যায় তাহলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা না কমে আরও বাড়বে। শুধু একটি বা দুটি নয়, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব দলকেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে সবার একত্রে কাজ করতে হবে।
দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকায়।(১৮/১২/২০১৮)
http://www.jaijaidinbd.com/todays-paper/editorial/27575/নিবার্চনে-লেভেল-প্লেয়িং--ফিল্ড-নিশ্চিত-করুন
দৈনিক যুগান্তর (১৯/১১/২০১৮)
https://www.jugantor.com/todays-paper/editorial/123537/লেভেল-প্লেয়িং-ফিল্ড-নিশ্চিত-করুন
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন