"বন্ধ হোক শিশু শ্রম"

"বন্ধ হোক শিশু শ্রম"

শফিকুল ইসলাম।(১৮/১০/২০১৮)

শিশুরা নিষ্পাপ, ফুলের মতো পবিত্র। কোমল তাদের মন।তাদের যেভাবে গড়ে তোলা হবে ভবিষ্যতে তারা ঠিক তেমনটাই হয়ে উঠবে।প্রত্যেক মা বা-বাবার স্বপ্ন থাকে নিজের অপূর্ব স্বপ্ন সন্তানের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করবে।তার ছোট্ট শিশুটিই একদিন তাদের স্বপ্ন পূরণ করবে।আজকের শিশুদের অবস্থা কী? তাদের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার পরিবেশ কি আমরা গড়ে তুলতে পেরেছি? যে বয়সে নানা রকম আনন্দে মেতে ওঠার কথা,সেই বয়সের অনেক শিশুকেই নিয়োজিত করা হয় ঝুঁকিপূর্ণ কাজে। সুবিধাবঞ্চিত বহু শিশুই গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছে। কাজের ঝুঁকির বিচারে বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত এই শিশুদের অনেককেই শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয়।এমনকি তিনবেলা পেট পুরে খাবারের নিশ্চয়তাও নেই। নির্যাতনের পর হত্যার ঘটনাও  দেশে কম নয়। বাংলাদেশে শিশুদের ওপর সহিংসতা বেড়েই চলেছে। শিশু নির্যাতন সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হচ্ছে।

দেশে সরকারি ও বেসরকারি ভাবে শিশু সুরক্ষায় নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। কিন্তু সামগ্রিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে শিশুর প্রতি সহিংসতার দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং ভয়াবহতা ও নৃশংসতা বেড়েছে।

বরিশাল নগরীর ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে লামিয়া আক্তার মারিয়া (১২) নামে এক শিশু গৃহপরিচারিকার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে গৃহকর্তা ও গৃহকর্ত্রী। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে তাকে একটি কক্ষে আটকে রেখে দিনের পর দিন শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়েছে।নির্যাতনের শিকার লামিয়া গৌরনদী থানাধীন বাটাজোরের নোয়াপাড়া এলাকার ইকবাল সরদারের মেয়ে।গত ১৫ অক্টোবর  ফেসবুকে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়।ধারাবাহিকভাবে নির্যাতনের শিকার লামিয়ার শরীরের বিভিন্ন স্থান ক্ষতবিক্ষত হওয়ার চিহ্ন দেখা যায়। মারধরের কারণে মারিয়ার দুই চোখের ওপরে ও নিচের অংশে রক্ত জমাট বাঁধে এবং ফুলে যায়।মাথা ফুলে বড় আকার ধারণ করেছে।দু’ হাতেই ক্ষত তৈরি হয়েছে। এর চিকিৎসা না করানোর ফলে তাতে পচন ধরেছে। ঐ শিশুকে সেই ঘরে কাজের মেয়ে হিসেবে এনেছিলো এক দম্পতি। ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে সামান্য খাবার চুরি করে খাওয়া, ঠিকঠাক সবকাজ করতে না পারার অপরাধে শিশু লামিয়ার ওপর দিনের পর দিন বর্বর নির্যাতন চালায় সেই নিষ্ঠুর দম্পতি।

সাগর, রাজন,রাকিব হত্যা- পরপর এই তিনটি নির্মম শিশু হত্যার ঘটনা সমাজকে নাড়া দিয়েছিল। তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল দেশব্যাপী।দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচার হওয়ায়  আশা করা গিয়েছিল এ ধরনের ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি দেখতে হবে না। কিন্তু তা হচ্ছে না। শিশু নির্যাতন, শিশু হত্যার নিষ্ঠুর ঘটনা ঘটেই চলেছে। দেশে শিশু নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে শিশুসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদ ও দেশের আইন যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়া।

ছোট ছোট বাচ্চারা শিশুশ্রমের শিকার হয়, স্কুল যাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়।আজকে আমার আমাদের আশে পাশের শিশু সন্তানটিকে যদি সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে বড় করে তুলতে পারি তাহলে আমরাও সুন্দর একটি সমাজ, সুন্দর একটি দেশ উপহার পাবো। তাই এই শিশুদের সঠিকভাবে গড়ে তোলার দায়িত্বও আমাদের নিতে হবে। প্রতিটি শিশুর সঠিক পরিচর্যা ও নিরাপত্তা পাবার অধিকার আছে। তার অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষার নিশ্চয়তা দিতে হবে এবং  তাকে কোনভাবে শারিরীক, মানসিক বা অন্য কোন রকম নিগ্রহ বা নির্যাতনের শিকার হতে দেয়া যাবে না এবং তাকে স্বাধীন ও মুক্ত পরিবেশে বড় হতে দিতে হবে।শিশুদের ভেতরে সুপ্ত-প্রতিভা থাকে। আমাদেরকে কেবল এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যাতে করে তাদের সেই প্রতিভা বিকশিত হতে পারে। এমন হতে পারে তাদের মাঝে থেকেই আমরা পেয়ে যাব ভবিষ্যতের বঙ্গবন্ধু, ভাসানী কিংবা শের-ই-বাংলার মতো নেতৃত্ব। জগদীশ চন্দ বসুর মতো কোনো বিজ্ঞানী, রবীন্দ্র-নজরুলের মতো কবি-সাহিত্যিক, রফিক-শফিকের মতো ভাষাপ্রেমিক, মতিউর-হামিদুরের মতো দেশপ্রেমিক বীর যোদ্ধা। তাই যারা দেশের ভবিষ্যৎ তাদেরকে তৈরি করতে হবে ভবিষ্যতের যোগ্য নির্মাতা হিসেবে।

রুশ লেখক আন্তন চেখভের মতো আমাদের শিশুদের যেন বলতে না হয়, ‘আমার শৈশবে আমার কোনো শিশুকাল ছিল না।’ শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তাই সকলের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হলে আমাদেরকে শিশু অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে। শুধুমাত্র আইন করে বা সনদ গৃহীত হলেই শিশুরা সুরক্ষা পাবে না। বরং সেগুলোর প্রয়োগ থাকতে হবে। আর এ জন্য দরকার কেবল আন্তরিক প্রচেষ্টা ও সদিচ্ছা। একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য শিশুদেরকে গড়ে তুলতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে তাদের বাঁধাহীন আনন্দময় শৈশব।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ফিচার কী? একটি সুন্দর ফিচার কিভাবে লিখবেন? উপাদান, বৈশিষ্ট্য, বিষয়বস্তু ।

চার কৌশলে সর্বোচ্চ সিজিপিএ, পেলেন প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক

কবে জুতা মুক্ত হবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার?